সদ্য সংবাদঃ-
    নড়াইল জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন সভাপতি তারিকুজ্জামান লিটু,সাধারণ সম্পাদক তুহিন আগামীতে ভালো কিছু করতে হলে বিএনপির নেতৃত্বেই হবে : তারেক রহমান নড়াইলের মিথিল যশোর-বেনাপোল সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত নড়াইল পৌর বিএনপির নব-নির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে গণসংবর্ধনা নড়াইলে তারুণ্যের উৎসবে বালক-বালিকাদের সাইক্লিং প্রতিযোগিতা নড়াইলের আমাদা কলেজে ষষ্ঠবার্ষিকী পিঠাউৎসব অনুষ্ঠিত ১৬ বছর পর নড়াইল পৌর বিএনপির কাউন্সিল॥ তেলায়েত সভাপতি ও ফসিয়ার সম্পাদক ও সাংগঠনিক ইবাদত নড়াইল সদর ও পৌর শাখা জামায়াতে ইসলামের কার্যালয়ের উদ্বোধন নড়াইলের আমাদা কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত নড়াইল সদর পৌর বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ঘিরে চলছে উৎসবের আমেজ চলছে প্রার্থীদের জোর প্রচারণা

    লোকায়ত শিল্পকলা সংরক্ষণে নড়াইলে প্রথম গড়ে উঠলো সংগ্রহশালা

    • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২

    লোকায়ত শিল্পকলা সংরক্ষণে নড়াইলে প্রথম গড়ে উঠলো সংগ্রহশালা

    খন্দকার সাইফুল নড়াইলঃ

    পটুয়ারা এক সময় ছবি এঁকেছেন শখের হাড়িতে, লক্ষীর সরায়, কাপড়,পিড়িঁ ইত্যাদিতে। সে সময় প্রতিটি গ্রামেই গাওয়া হতো পটের গান। এখন এসব গান
    প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এক সময় যেভাবে পটগুলো আঁকা হতো এবং যে ধরনের রং ব্যবহার করা হতো সে বিষয়ে ব্যাপক খোঁজ খবর নিয়ে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে এবং এসব স্মৃতি ধরে রাখতে পটচিত্র এঁকে যাচ্ছেন
    বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস.এম সুলতানের শিষ্য,নড়াইল সরকারি উচ্চ বালিকা
    বিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক চিত্রশিল্পী নিখিল চন্দ্র দাস।

    এছাড়াও তিনি লোকসংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লোকশিল্প যেমন-নকসি
    কাঁথা,সুচিকর্ম, শিকা, মৃৎপাত্র, সজ্জা, সখের হাড়ি, কলসি, পুতুল, আল্পনা,
    মনষা ঘট, খেলনা, বিলুপ্ত হওয়া বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট কাঠের নৌকা, মাছ
    ধরার জাল এবং গ্রাম বাংলার মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত লোকসাহিত্য যেমন-
    বিভিন্ন কাহিনী-কিসসা, প্রবাদ-প্রবচন, ছড়া কাব্য, ধাঁধা, লোকগাথা,
    লোকগীতি,নৃত্য ও নৃত্যের মুদ্রা সংগ্রহ করে গবেষণামূলক কাজ করছেন ও এসব
    বিষয়ের ওপর ছবি আঁকেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করার পর এখন এই
    লোকসংস্কৃতিকে সংরক্ষণে গড়ে তুললেন একটি সংগ্রহশালা। তিনি তার বাবা বিমল
    চন্দ্র দাস এবং মা সূর্য রাণী দাসের নামে গড়ে তুলছেন এই স্মৃতি
    সংগ্রহশালা, যার নাম দিয়েছেন ‘বিমল সূর্য স্মৃতি সংগ্রহশালা’।

    বুধবার (২৬ অক্টোবর) শিল্পীর নড়াইল শহরের আলাদাতপুর এলাকায় নিজ বাড়িতে
    গড়ে তোলা এই সংগ্রহশালার শুভ উদ্বোধন করলেন ভারত থেকে আগত লোকসংস্কৃতি
    গবেষক ড. চিত্তরঞ্জন মাইতি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন
    নড়াইল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ রবিউল ইসলাম।

    অনুষ্ঠানে সংগ্রহশালার প্রতিষ্ঠাতা চিত্রশিল্পী নিখিল চন্দ্র দাসের
    সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নড়াইল সরকারি মহিলা কলেজের
    অধ্যক্ষ প্রফেসর সাহানারা বেগম, এস এম সুলতান বেঙ্গল চারা ও কারুকলা
    মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ অনাদী বৈরাগী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নড়াইলের
    সভাপতি মলয় কুন্ডু,জেলা কালচারাল অফিসার হায়দার আলী, জারিশিল্পী অধ্যক্ষ
    রওশন আলী, এস এম সুলতান সংগ্রহশালার কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জী,
    বিমল-সূর্য স্মৃতি সংগ্রহশালার আহবায়ক গীতা রাণী দাস প্রমুখ।

    চিত্রশিল্পী নিখিল চন্দ্র দাস এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, হারিয়ে যাওয়া এই লোক
    শিল্পকে সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মের সাথে লোকায়ত এই শিল্পের পরিচয় করিয়ে
    দিতে আমার এই উদ্যোগ। প্রথমাবস্থায় এই সংগ্রহশালায় ৫শতাধিক পটচিত্র
    পেইন্টিং এবং প্রায় দেড় হাজার লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করা
    হয়েছে। কয়েকটি পটের গান যেমন-১.“তিন সকি যায় জল আনিতে/মদ্যির সকি
    কালো/আগের সকির দাতে মাজন/ঘাট করিছে আলো”, ২. “কালা বাসরি বাজায়/ দুই
    নয়নে জ্বলে কালার বুক ভেসে যায়”, ৩.“বাদা বোনে বাগ রে ভাই/ঢালু মালু চায়/নৌকততে মানুষ ধইরে/ডাঙ্গায় বইসে খায়”,৪. “ছোট-খাটো মিয়ারে ভাই মুখে
    চাপ দাড়ি/ পাকা ধানে গরু দিয়ে হুক্কা টানে বাড়ি”, ৫.‘‘ও দাদা যাসনে
    বিদেশে/তোগে মাইয়ে খাবে পূবে বাঙ্গালে’’।

    অর্থঃ সকি—সখি,মদ্যি—মধ্যে,দাতে মাজন—দাঁতের পেষ্ট, কালা—একজনের নাম,
    বাসরি—যে বাঁশি বাজায়,বাদা বোনে—সুন্দরবনে, বাগ—বাঘ,নৌকততে—নৌকা
    থেকে, ধইরে—ধরে, ডাঙ্গায়—নদী বা খালের তীরে, বইসে—বসে, মিয়া—একজন মুসলিমকে বোঝানো হচ্ছে, তোগে—তোদের, মাইয়ে—কন্যা, পূবে বাঙ্গালে—বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের মানুষদের বোঝায়। এই সংগ্রহশালাকে দিন
    দিন সমৃদ্ধ করার আশা রয়েছে বলে জানান।

    তিনি জানান, ২০২২ সালের জানুয়ারী মাসে ভারতের উড়িষ্যার তৃতীয় আন্তর্জাতিক
    আর্ট ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়ে বিভিন্ন দেশের ১শ ৫০জন চিত্রশিল্পীর মধ্যে
    শ্রেষ্ঠ পুরস্কার “ওয়াল্ড আর্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড” সম্মানে ভূষিত হন।
    প্রদর্শনীতে তার ছবির মাধ্যম ছিল “ গ্রামীন পটভূমিতে আঁকা পটচিত্র”।

    ইতিমধ্যে তার ছবি ঢাকা যাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, সচিবালয়,
    শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান পেয়েছে। এছাড়া ভারত, জাপান, অষ্টোলিয়া,আমেরিকার বিভিন্ন ব্যক্তি তার কাছ থেকে পটচিত্র কিনে সংগ্রহে রেখেছেন।
    তার ছবি নিয়ে সরকারিভাবে ডুকুমেন্টরি তৈরি হচ্ছে। পটচিত্র নিয়ে একটি
    সিনেমাও তৈরি হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা ও জাহাঙ্গীরনগর
    বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পটচিত্রের ওপর
    কর্মশালা করিয়েছেন বলে জানান।

    সংগ্রহশালার উদ্বোধক লোকসংস্কৃতি গবেষক ড. চিত্তরঞ্জন মাইতি বলেন, নড়াইলে লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণে একটি আন্তর্জাতিকমানের মিউজিয়াম গড়ে উঠলে বিদেশীরা
    এখানে আসবেন, অনেকে গবেষণা করবেন। তারা পটচিত্রসহ লোকশিল্পের বিভিন্ন
    জিনিস কিনবে, লোকসাহিত্য সংগ্রহ করবে এবং এর সাথে পরিচিত হবে। ফলে লোক শিল্পীদের আর্থিক উন্নয়ন ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

    জানা যায়, ১৯৭৮ সালে কালিয়া উপজেলার মাউলি ইউনিয়নের মাউলি গ্রামের সন্তান
    এই চিত্রশিল্পী এস.এস.সি পাশ করেন। ১৯৮০ সালে বরেণ্য শিল্পী সুলতানের অনুপ্রেরণায় রাজশাহী চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৮৩ সালে
    প্রি-ডিগ্রি এবং ১৯৮৮ সালে ঢাকা চারু ও কারুকলা ইনষ্টিটিউটের কারুকলা বিভাগ থেকে বিএফএ পাশ করেন।

    Share This Post in Your Social Media

    Comments are closed.

    More News Of This Category
    All rights reserved © Tech Business Development Ltd.
    Support BY TechITBD
    error: Content is protected !!