বছরজুড়েই সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকরা ফিরছেন। নিয়মিত বিরতিতে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর হতাশা আর চাপা ক্ষোভে ডুবেছে।
তবে নভেম্বর মাসের প্রথম দিন থেকেই প্রবাসী কর্মীদের ফেরার সংখ্যাটি আশংকাজনক।
বুধবার রাতে আরও ৯৬ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। বুধবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০৪ বিমানযোগে তারা দেশে ফেরেন।
এ নিয়ে এ মাসের প্রথম পাঁচদিনেই মোট ৪২১ জন ফিরলেন। এর মধ্যে ১ নভেম্বর ১০৪ জন, ২ নভেম্বর ৭৫ জন, ৩ নভেম্বর ৮৫ জন, ৪ নভেম্বর ৬১ জন ও গতকাল ৬ নভেম্বর ৯৬ জন ফিরেছেন।
এর আগে গত ৫ অক্টোবর ১২০ জন, ২৭ অক্টোবর ১৬০ জন এবং ৩১ অক্টোবর ১৫৩ জন বাংলাদেশি কর্মী ফিরেছেন।
চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এই দশ মাসে সৌদি আরব থেকে ২০ হাজার ৬৯২ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক।
এ পরিসংখ্যানে যুক্ত হলো নভেম্বরের আরও ৪২১ জন।
আর এসব প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী সবাই ফিরেছেন, একেবারে খালি হাতে, নিঃস্ব হয়ে। অনেকের গায়ে ছিল কম্পানির পোশাক, কারও পায়ে ছিল না স্যান্ডেলও। অনেকে পরনোর পোশাক ছাড় সঙ্গে করে আর কোনো কাপড় আনতে পারেননি।
সৌদি আরবের রাস্তায়, দোকানে ধরপাকড়ে পরে এসব বাংলাদেশি শ্রমিক এক কাপড়েই দেশে ফিরছেন। ইকামা (সৌদি আরবের রেসিডেন্স পারমিট) বৈধরাও এ ধরপাকড় অভিযানে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে দেশে ফিরছেন।
গতকাল ফেরাদের একজন হলেন কিশোরগঞ্জের তোফাজ্জল। তিনি জানান, সৌদি আরবে যাওয়ার খরচই যোগাড় করতে পারেননি তিনি। মাত্র আড়াই মাস আগে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। এর মধ্যেই ধরপাকড়ে পড়ে তাকে ফিরতে হলো।
গত তিন বছর ধরে সৌদি আরবে চাকরি করছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহিউদ্দিন। সম্প্রতি সাড়ে ১৮ হাজার রিয়াল ( প্রায় চার লাখ টাকা) দিয়ে ইকামা নবায়নও করেছিলেন। তবুও ধরপাকড়ের শিকার হয়ে শূন্য হাতে বাংলাদেশে পা রাখতে হলো তাকে।
মহিউদ্দিনের মতোই অভিযোগ গাজীপুরের মো. হান্নান মিয়ার।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে সৌদি আরবে ছিলাম। আমার বৈধ ইকামা রয়েছে। ওখানের অধিবাসীরা আমাকে চেনে। এরপরও রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে আমাকে এক কাপড়ে দেশে পাঠিয়ে দিল সৌদি পুলিশ।
ইকামা দেখিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যা, আকামা দেখিয়েছিলাম, কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। সৌদি পুলিশরা তাদের ভুল স্বীকার করে না।
একইভাবে কাজে যোগদান করতে গিয়ে সৌদি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দেশে ফিরিছেন নোয়াখালীর জয়নাল, ময়মনসিংহের আলম, জামালপুরের সবুজ মিয়া, বরিশালের মামুনসহ আরও অনেকে। তাদের অনেকেই জমি, ভিটে-মাটি বিক্রি করে প্রায় নিঃস্ব হয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। আর যাওয়ার খরচ যোগাড় না করা ছাড়াই ফিরতে হয়েছে তাদের।
এদিকে সৌদি আরবে তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হওয়া তিন নারী আজ দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। তাদের নাম, শাহিদা, মনোয়ারা, মিনা।
পরিবারের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল ব্র্যাক।
বরাবরের মতো গতকাল ফেরত আসাদেরও প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে খাবার-পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য জরুরি সহায়তা প্রদান করা হয়।
ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার বাংলাদেশিকে সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ বছরের কোন মাসে কত কর্মী ফিরেছে সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি গত দুই মাস ধরে ধরপাকড়ের তীব্রতা বেড়েছে।
তিনি বলেন, অনেকেই মনে করেন ইকামা থাকলেই বৈধ। কিন্তু কেউ যদি বৈধ ইকামা থাকার পরেও যেখানে কাজ করার কথা সেখানে না করে অন্য জায়গায় কাজ করেন, সৌদি আইন অনুযায়ী সেটাও অপরাধ। এই বিষয়গুলো কর্মীদের বোঝাতে হবে। আর রিক্রুটিং এজেন্সিকেও নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোনো একজন কর্মী যেখানে যান সেখানে গিয়ে সেই কাজ পান। ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা বন্ধ করা উচিত।