শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশের দক্ষিনাঞ্চলের চার জেলা (বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর) নিয়ে গঠিত বরিশাল পোস্টাল বিভাগে উদ্যোক্তাদের পাশে থেকে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ডাকবিভাগের শ্রেষ্ট ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মোঃ মিজানুর রহমান।
জানা যায় বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১): রুপকল্প ২০২১ বাস্তবে রুপায়ন”-এ ডাক সেবা উন্নয়ন অংশে বিধৃত অভ্যন্তরীণ ও আন্তজার্তিক ডাক নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে সঙ্গতি বিধান, দেশের সকল ডাকঘরের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, গ্রাহক-উপযোগী পণ্য ও সেবা প্রদান, স্বল্প-সুবিধাযুক্ত এলাকাগুলোতে ডাকসেবার বিস্তার, উন্নয়ন, দারিদ্র্য নিরসন এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে শহর ও গ্রামের মধ্যকার অসংগতি দুরীকরণে ডাক বিভাগ পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বরিশাল বিভাগে প্রায় ৫৫০ টির অধিক গ্রামীন ডাকঘরে পোস্ট ই-সেন্টার কার্যক্রম চালু হয়। যেখানে কম্পিউটার কম্পোজ, প্রিন্টিং, স্ক্যানিং, ছবি প্রিন্ট, ই-মেইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল,ইন্টারনেট ব্রাউজিং, দেশে-বিদেশে ভিডিও কনফারেন্স, আর্থিক সেবা, এজেন্ট ব্যাংকিং ,সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভাতা প্রদান,ই-কমার্স ,বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং ,কম্পিউটার প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হতো।
চালু হওয়ার পর থেকে ধীর গতিতে পোস্ট ই-সেন্টারের কার্যক্রম চললেও বর্তমান ডেপটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মোঃ মিজানুর রহমান ২০১৭ সালে যোগদান করার পর থেকে বেশ কিছু নতুন সেবা যুক্ত হওয়াসহ সার্বিক কাজের গতি বেড়েছে।
বর্তমানে পোস্ট-ই- সেন্টার নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ডিজিটাল পোস্ট অফিস নাম করন করা হয়েছে এবং নতুন করে কম্পিউটারের উপর মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান। বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে আত্বকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত জনগণকে ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করার জন্য ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট ব্যাকিং ও সোনালী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাকিং সেবা। ই-কমার্সের সেবা প্রদান। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভাতা প্রদান। ডাক জীবন বীমা পলিসি বিক্রয় এবং প্রিমিয়াম আহরণ ও বিতরণ করা। ই-বিজনেস এর সম্প্রসারণ। টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান। কৃষি তথ্য সেবা, বালাই ব্যবস্থাপনা সেবাসহ অন্যান্য ই-সেবা যুক্ত করা হয়েছে।
বেকার জীবন কাটাচ্ছিলেন বরিশাল হিজলা উপজেলার ওসমান মঞ্জিল এলাকার মোঃ ইসমাইল হোসেন। আট ভাইবোনের মধ্যে ইসমাইল তৃতীয়। তার নামের আগে এখন আর বেকার ইসমাইল লাগানো হয় না। ওসমান মঞ্জিল সাব পোস্ট অফিসের উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করার সুবাদে এখন তার মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকা।
পোস্ট ই-সেন্টার সম্পর্কে তজমুদ্দিন ডিজিটাল পোস্ট অফিসের উদ্যোক্তা মো. নজরুল ইসলাম শুভ রাজ বলেন, মানুষ যখন জানতে পারবে পোস্ট ই-সেন্টারের মাধ্যমে ই-মেইল আদান-প্রদান, কম্পিউটার কম্পোজ, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ছবি স্ক্যানিং, ছবি তোলা ও প্রিন্ট দেয়া, কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় কম্পিউটার ভিত্তিক কাজের পাশাপাশি টাকা পাঠানো হয়। এমনকি ৪৫ টাকার বিনিময়ে পোস্টাল ক্যাশ কার্ডের মাধ্যমে হিসাব খুলে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেন করা সম্ভব। তখন তাদের মতো উদ্যোক্তাদের আয়ের পরিমাণ বাড়বে। এক সময় দেখা যাবে উদ্যোক্তারা আর সরকারি চাকরি খুঁজবে না।
ভান্ডারিয়া ডিজিটাল পোস্ট অফিসের উদ্যোক্তা সাগর কুমার মিস্ত্রি বলেন, ই-সেন্টারের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতাসমূহ পরিশোধ, জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম, জমির পরচা, আর্থিক সেবা, বীমা সংক্রান্ত কার্যক্রম, ইউটিলিটি বিল পরিশোধের সেবা দেয়া হয়। প্রতিটি পোস্ট ই-সেন্টার থেকে আয়ের শতকরা ৮০ ভাগ উদ্যোক্তা হিসেবে পাই এবং ২০ ভাগ সরকারি রাজস্ব খাতে জমা দিই। তবে আমরা বর্তমানে আমাদের ডিপিএমজি স্যারের মাধ্যমে অনেকগুলো ট্রেনিং করেছি এবং বরিশাল ও ঢাকায় উদ্যোক্তা সম্মেলন করেছি। স্যার আমাদের প্রতি খুব আন্তরিক যা পূর্বে কোন স্যার ছিলেন না।
বরিশাল বিভাগের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি প্রকল্পের অধীনে ডাকঘরগুলোকে পোস্ট ই-সেন্টারে রূপান্তর করা হয়েছে। আমরা আশা করি ডাক বিভাগের প্রধান কার্যালয়সহ গ্রামগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার ডাকঘরের অবস্থাও পাল্টে যাবে এবং এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ডাক বিভাগ ভুমিকা রাখতে পারবে। ফলে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ইতোমধ্যেই ডাক বিভাগকে নিয়ে নানামুখী উন্নয়নমূলক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে সরকার। যার সুফল পাচ্ছে জনগণ। সব কর্মসূচী বাস্তবায়িত হলে ডাক বিভাগ জনসেবায় হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে। আমাদের সকল কর্মসূচী বাস্তাবায়ন করার জন্য বর্তমান মহাপরিচালক শুধাংশু শেখর ভদ্র ও খুলনার পিএমজি তরুন কান্তি সিকদার এর দির্ক নির্দেশনা আমি কাজ করে যাচ্ছি।
তবে জানা যায় বর্তমান ডিপিএমজি যোগদান করার পর থেকে উদ্যোক্তাদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সার্বক্ষনিক সুবিধা-অসুবিধার বিষয়ে যোগাযোগ করেন এবং উদ্যোক্তাদের সমস্যা সমাধান করার ব্যবস্থা করেন। যার কারনে উদ্যোক্তারা আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন এবং সারা দেশের মধ্যে বরিশাল বিভাগ শ্রেষ্ট বিভাগ হিসেবে রুপান্তর হয়েছে।