নড়াইলে ইট ভাটা বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান
খন্দকার সাইফুল নড়াইল:
নড়াইলের ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, জরিমানা, ভাটা ভাংচুর ও ভাটা বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বেলা ১১টায় নড়াইল শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এসে শেষ হয়। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, নড়াইল জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এম এম রেজাউল আলম, সহ-সভাপতি বি এম রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ কারিমুল করিম কুশাল প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, এই শিল্পে প্রায় ৫০ লক্ষ শ্রমিক কর্মরত আছে এবং ৫০ লক্ষ পরিবার তথা ২ কোটি মানুষের রুটি রুজির ব্যবস্থা আমরাই করেছি, ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেলে এই লোকগুলো বেকার হয়ে পড়বে। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি ইট ভাটার বিপরীতে ১ কোটি টাকার উপরে ব্যাংক লোন যা প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা এই ভাটা সমূহ বন্ধ হয়ে গেলে সমূদয় ব্যাংক লোন অনাদায়ী থেকে যাবে। ইট ভাটার মালিকগণ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার অধিক রাজস্ব দিয়ে থাকেন।
এ সময় উপস্থিত শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে শ্লোগান দিতে থাকেন।
স্মারক লিপিতে জানানো হয়,
আমরা বাংলাদেশের ইটভাটা মালিকগন বিগত ৩৫/৪০ বৎসর যাবৎ অনেক প্রতিকুলতার মধ্যে দিয়ে ইটভাটার ব্যবসা পরিচালনা করিয়া আসিতেছি। দেশের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ী সহ সকল অবকাঠামো নির্মানে ব্যবহৃত ইট সরবরাহ করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছি। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সমতা রেখে আমরা ইটভাটার মালিকগন বায়ুদূষণ রোধে সরকার নির্দেশিত আধুনিক প্রযুক্তির জিগজাগ ভাটা স্থাপন করি যাহা জ্বালানী সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি, ও উপমহাদেশে টেকসই এবং সহজ প্রযুক্তি হিসাবে পরিচিত।
বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে এখন দেশের ইটভাটা সমূহ মাত্র ৫-১০% বায়ু দূষন করছে, জৈব বস্তু পোড়ানোতে ৪০% এবং যানবাহনের কালো ধোয়া ৫০% (দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা ০৬-০৩-২০২১ ইং তারিখে প্রকাশিত রিপোর্টে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের রসায়ন বিভাগের জরিপ)। পূর্বে ইটভাটার দূষনমাত্রা ছিল ৫৮%। বিদ্যমান জিগজাগ ভাটায় আরও অধিকতর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
এই শিল্পে প্রায় ৫০ লক্ষ শ্রমিক কর্মরত আছে এবং ৫০ লক্ষ পরিবার তথা ২ কোটি মানুষের রুটি রোজীর ব্যবস্থা আমরাই করেছি, ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেলে এই লোকগুলো বেকার হয়ে পড়বে। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি ইভাটিার বিপরীতে ১ কোটি টাকার উপরে ব্যাংক লোন যা প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা এই ভাটা সমূহ বন্ধ হয়ে গেলে সমূদয় ব্যাংক লোন অনাদায়ী থেকে যাবে। ইটভাটার মালিকগণ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার অধিক রাজস্ব দিয়ে থাকেন।
মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রেজিওয়ানা হাসান অত্যান্ত আন্তরিক হলেও বর্তমান আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে জিগজাগ ইটভাটার সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। আমরা আশা করছি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এবং মাননীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার মাধ্যমেই ইটভাটা পরিচালনার একটি যুক্তিক সমাধান হবে। সবার আগে ড্রাম চিমনী, ফিক্সড চিমনী ও লাকড়ী দিয়ে পোড়ানো ইটভাটা সম্পূর্ণ বন্ধ করা সিদ্ধান্তে মাননীয় উপদেষ্টার সাথে আমরা একমত পোষন করেছি কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহা না করে তার বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়ে বৈধ পদ্ধতির জিগজাগ ইটভাটায় জরিমানা ও ভাংচুর করছেন। আমরা কোন অবস্থাতেই এই সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ঠেলে দিতে চাই না কিন্তু বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের মদদপুষ্ট বসুন্ধরা, কনকর্ড সহ আধিপত্যবাদী প্রতিষ্ঠান সমূহ ইট শিল্পকে ধংশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং বর্তমান সরকারের মখোমুখি আমাদেরকে দাড় করানোর চেষ্ঠা করছে।
জিগজাগ ইট ভাটা বন্ধের প্রতিবাদ এবং ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০১৩ এবং ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রন (সংশোধন) আইন ২০১৯ এ বর্ণিত জিগজ্যাগ ইটভাটার ছাড়পত্র ও লাইসেন্স প্রাপ্তির জটিলতা নিরসনের জন্য বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির বক্তব্য ও প্রস্তাব নিম্নে উল্লেখ করছিঃ
১। ২০১৩ সনের ইটভাটা নিয়ন্ত্রন আইনের জিগজাগ ভাটা বৈধ পদ্ধতির উল্লেখ থাকলেও উক্ত আইনের ৮(৩) (৩) এবং ৮ (৩) (খ) উপ-ধারায় “দুরত্ব নির্দিষ্ট” করনের কারনে দেশের কিছু জিগজাগ ইটভাটার মালিকগণ ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাচ্ছেন না। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর হাইব্রিড কিলুন এবং ট্যানেল কিলন এর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ১০০০মিটারের পরিবর্তে ৪০০ মিটার নির্ধারন করেছে সুতরাং আমাদের জিগজ্যাগ ভাটার জন্য উক্ত আইনের ৮ (৩) (ঙ) ধারায় নিষিদ্ধ এলাকার দুরত্ব ৪০০ মিটার এবং আইনের ৮ (৩) (খ) এ বনের দুরত্ব ৭০০ মিটার করে লাইসেন্স ও ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিপত্র জারীর মাধ্যমে পরিচালনা করার সুযোগ প্রদানের আবেদন জানাচ্ছি।
২। জিগজাগ ইটভাটায় কোন প্রকার হয়রানী বা মোবাইল কোর্ট করা যাবে না, তাহা না হলে আমরা ভ্যাট টেক্স দেয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবো।।
৩। কোন ইটভাটা বন্ধ করতে হলে সরকারী ভাবে আর্থিক ক্ষতিপূরন দিয়ে বন্ধ করতে হবে। ৪। মাটি কাটার জন্য ডিসির প্রত্যয়নপত্র নেয়ার বিধান বাতিল করতে হবে।
৫। পরিবেশগত ছাড়পত্র, ডি.সি লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স সহ অন্যান্য কাগজপত্রাদি ইস্যু/নবায়নের সময় কেন্দ্রীয় ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির প্রত্যয়ন পত্র বাধ্যতামূলক ভাবে জমা দেয়ার বিধান করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ করছি।
৬। ইটভাটাকে শিল্প হিসাবে ঘোষনা দেয়ার দাবী করছি।
৭। ইটভাটা পরিচালনায় দীর্ঘ মেয়াদী পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রনয়ন করতে হবে।
ও স্মারকলিপি প্রদান করার ঘোষনা দিচ্ছি।
উপরোক্ত দাবী সমূহ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে আলোচনায় না বসলে ইদের পরে ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় পদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদান করার ঘোষণা দিচ্ছি।
Leave a Reply