সদ্য সংবাদঃ-
    নড়াইল জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন সভাপতি তারিকুজ্জামান লিটু,সাধারণ সম্পাদক তুহিন আগামীতে ভালো কিছু করতে হলে বিএনপির নেতৃত্বেই হবে : তারেক রহমান নড়াইলের মিথিল যশোর-বেনাপোল সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত নড়াইল পৌর বিএনপির নব-নির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে গণসংবর্ধনা নড়াইলে তারুণ্যের উৎসবে বালক-বালিকাদের সাইক্লিং প্রতিযোগিতা নড়াইলের আমাদা কলেজে ষষ্ঠবার্ষিকী পিঠাউৎসব অনুষ্ঠিত ১৬ বছর পর নড়াইল পৌর বিএনপির কাউন্সিল॥ তেলায়েত সভাপতি ও ফসিয়ার সম্পাদক ও সাংগঠনিক ইবাদত নড়াইল সদর ও পৌর শাখা জামায়াতে ইসলামের কার্যালয়ের উদ্বোধন নড়াইলের আমাদা কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত নড়াইল সদর পৌর বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ঘিরে চলছে উৎসবের আমেজ চলছে প্রার্থীদের জোর প্রচারণা

    জেলা প্রশাসককে সভাপতি বানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলের মাধ্যমে এতিমখানা ব্যবসা

    • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০২৩

    জেলা প্রশাসককে সভাপতি বানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলের মাধ্যমে এতিমখানা ব্যবসা

    নড়াইল প্রতিনিধিঃ
    নড়াইলের সীমানন্দপুর এতিমখানায়
    সরকারী অনুদান দেয়া হয় ১০৫ জনের,কাগজে কলমে প্রায় ২’শ জনকে দেখিয়ে চলছে এতিমখানা ব্যাবসা। বাস্তবে ২৫ জনও এতিম নেই এতিমখানায়।

    প্রতিবছর ১০৫ জনের জন্য বরাদ্দকৃত ২৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে। এর বেশিরভাগই চলে যায় এতিমখানার সুপার আর অন্যদের পকেটে। জেলা প্রশাসককে সভাপতি বানিয়ে এভাবে বছরের পর বছর ধরে চলছে প্রতারনা আর সরকারী অর্থ লোপাট। অথচ যে কয়জন দরিদ্র এতিমশিশু থাকে তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে কেবলই আলুভর্তা আর ডাল। ভয়ে এতিম শিশুরা সেসব বিষয়ে মিথ্যা বানিয়ে বললেও কয়েকজন গোপনে স্বিকার করেছে খাওয়ার অনিয়মের কথা।

    সদরের চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের সীমানন্দপুর গরীবশাহ এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিং এ গিয়ে দেখা মেলে ৭-১৫ বছর বয়সী কয়েকশিশুর। সাংবাদিক দেখেই শিশুরা ভীড় করে। এতিমখানায় হেফজখানার (আরবী পড়ার স্থান) শিক্ষক মো.আবু জাফর কে প্রশ্ন করা হয় ১০৫ জনের স্থলে কতজন এখানে থাকে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এখানে ৬০ জনের মতো থাকে। হেফজখানায় পড়ে প্রায় ২’শ জন। তার কাছে হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে বলেন এটা রয়েছে সুপারের কাছে।

    ১২ বছরের লামিম, ৫ বছরের আহাদুল, লিমন, হাবিবুর জানায়, সকালে পটল দিয়ে ভাত খেয়েছে,দুপুরে আলুভর্তা আর ডাল। রাতের খাবার কি হবে তা জানে না। এতিম খানার রান্নাঘরে দেখা যায় রাতের খাবারের জন্য সস্তা তরকারী মূলা কাটা হচ্ছে। রান্নাঘরে কাজ করা রাধুনি আম্বিয়া কে কতজনের রান্না হচ্ছে এটা জিজ্ঞেস করতেই হেসে দিয়ে উত্তর দেন ৬০ জনের মতো। পরে জানান ৫০-৬০ জনের মতো।

    এতিমখানার ৩টি সেডের মধ্যে পুরাতন সব বিছানায় শিশুদের ময়লা কাথা আর তোষকে শোয়া। নোংরা বাথরুম আর মাটিতে বস্তা বিছিয়ে খাওয়া এভাবেই চলছে বসবাস। আবার পাটিতে নীচেও থাকে কেউ কেউ।

    এতিম খানার পাশের একজন নারী নিজের নাম না বলার জন্য তিনি অনেক অনুরোধ করে গোপনে বলেন,এই এতিমখানায় বাচ্চাদের খুবই খারাপ খাওয়ায়। মাছ তো দেয়ই না, মাসে একদিন পোল্ট্রি মুরগির ছোট এক টুকরা দেয়। বাকি দিনগুলোতে ডাল আর হাবিজাবি তরকারী। ।

    শিক্ষকের ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি পিছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন এতিমখানার সুপার রকিবুল ইসলাম। সুপার রকিবুল ইসলাম এসেই মোবাইল ফোনে পাশের ভূইয়া আজিজুর রহমান বালিকা এতিমখানার সুপার আব্দুল কাদের কে দ্রুত আসতে বলেন। পরে জানান,কাদের কাকা আসছে উনি আপনাদের সাথে কথা বলবেন। কম এতিম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, বেশিরভাগ এতিম ছুটিতে রয়েছে, আর খাওয়া দাওয়াসহ সবকিছু তো আগের থেকে ভালো চলছে। এতিমদের তালিকা দেখতে চাইলে তিনি নানা তালবাহানা করে পুরাতন কিছু খাতাপত্র খুজতে থাকেন। না পেয়ে পরে জানান ওগুলো সমাজসেবায় জমা দেয়া আছে।

    একটু পরে চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর ভুইয়ার খাস লোক আব্দুল কাদের এতিমখানায় হাজির হন। তিনি সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন

    খোজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮১ সালে স্থাপিত এই এতিমখানাটি জেলার প্রাচীণতম। শুরুতে এতিম শিশুদের কল্যানার্থে যাত্রা শুরু হয় মাওলানা মকবুল হোসেন এর মাধ্যমে। তিনি মারা গেলে তারপর থেকে হাল ধরেন চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান। তার ছেলে রকিবুল ইসলাম কে নামমাত্র সুপার বানিয়ে এতিমদের জন্য সরকারী বরাদ্দকৃত টাকা থেকে পকেট ভরেন চন্ডিবরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ভূইয়া আজিজুর রহমান যিনি নিজের নামেই পাশে গড়ে তুলেছেন ভূইয়া আজিজুর রহমান বালিকা এতিমখানা। সেখানের সুপার আব্দুল কাদের কে দিয়ে এতিমদের নামে বরাদ্দকৃত টাকা ভোগ করেন।

    এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান বলেন, আমি তো ওটার দ্বায়িত্বে নই। ওটার সভাপতি ডিসি সাহেব । আমি অসুস্থ্য থাকায় গত ৫/৬ মাস খবর নিতে পারি না। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হিসেবে আমার দায় আছে, ভালো করার চেষ্টা করছি।

    সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারীভাবে ১০৫ জন এতিমের জন্য মাসে ২হাজার টাকা হিসেবে প্রতিবছর দুইবার অনুদানের অর্থ প্রদান করা হয়। সান্মাসিক ১২ লক্ষ ৬০ হাজার করে বছরে দেয়া হয় ২৫ লক্ষ২০ হাজার টাকা। নিয়ম অনুযায়ী ১০৫ জনের স্থলে দ্বিগুন এতিম থাকার কথা ২১০ জন। বাস্তবে পাওয়া গেলো ৩০ জন। বছরের পর বছর এতিমদের নামে অর্থ আত্মসাৎ হলেও সমাজসেবার তদারকি নেই।

    সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার উত্তম সরকার বলেন, আমরা যখন পরিদর্শনের যাই তখনতো ক্যাপিটেশন পাওয়ার সকল আবাসিক ছেলেই উপস্থিত থাকে। আপনি যখন বললেন তখন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করবো।

    এদিকে জেলা প্রশাসক সভাপতি হওয়ায় এতিমদের জন্য সরকারী বরাদ্দের বাইরে টি আর,কাবিখা এবং প্রশাসনের অন্যান্য সুবিধাধি পেয়ে থাকে এতিমখানাটি। জেলা প্রশাসক সভাপতি থাকায় এলাকার লোকেরা এতিমখানার অনিময় নিয়ে কোন কথাই বলতে সাহস করেন না।

    নড়াইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম বলেন, এটা প্রথম শুনলাম ঠিক আছে আপনি যখন বলছেন আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।

    এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি এ বিষয়টি এখনো জানিনা, তবে পরিদর্শন করে আপনাদের বলতে পারবো।

    Share This Post in Your Social Media

    Comments are closed.

    More News Of This Category
    All rights reserved © Tech Business Development Ltd.
    Support BY TechITBD
    error: Content is protected !!