ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাংলাদেশের উপকূলের ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসায় মোংলা ও পায়রা বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। কক্সবাজারে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেতের পরিবর্তে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
“শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা ৪৫ মিনিটে মোংলা ও পয়রা সমুদ্র বন্দরের জন্য ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত উঠিয়ে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষণা কর হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাবে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খুলনায় ৭ মিমি বৃস্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর বৃস্টি ও বাতাসের বেগ বাড়তে শুরু করে।”
এর আগে শুক্রবার সকাল ৬টায় বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম এবং পূর্ব-কেন্দ্রে থাকা ঘূর্ণিঝড় “বুলবুল” উত্তর-পশ্চিম উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে বলে জানান আবহাওয়াবিদেরা।
এদিকে, উপকূলীয় অঞ্চলের ১ হাজার ৩৭৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি ৩৩৮টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভোলার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিকী এক জরুরি সভায় জানান, জেলায় ৬৬৮টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, আটটি কন্ট্রোল রুম, ৪৯ মুজিব কেল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেই সাথে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৯২টি মেডিকেল দল, ১৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত আছেন। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কাজ করার জন্য জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি বিষয়ে সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, বুলবুলের প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ভোর থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সেই সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া জেলার ১৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া জন্য এলাকায় মাইকিং করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। একইসঙ্গে উপকূলীয় এলাকার জেলে-বাওয়ালীদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ বলেন, “নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে জেলা প্রশাসন সুন্দরবনের দুবলার চরের ঐতিহ্যবাহী রাশ মেলা উৎসব স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা কেন্দ্রগুলোতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।”
“ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর তাৎক্ষণিক সাপোর্ট হিসেবে ১৯০ মেট্রিক টন খাবার ও নগদ দুই লাখ টাকা মজুত রয়েছে। আপদকালিন সহায়তা আরও বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে জরুরি চিঠি পাঠানো হবে”, যোগ করেন তিনি।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৪০৩টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সার্বিক বিষয় মনিটরিং করতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। দুর্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১০০ মেট্রিক টন চাল, দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ১৬৬ বান্ডিল টিন এবং ৩৫০০ কম্বল মজুত রাখা হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সাগরে সৃষ্ট ঝড়ো হাওয়ায় কুয়াকাটায় বেলাল হোসেন (৪০) নামে এক জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে এফ বি মা কুলসুম নামের একটি মাছ ধরা ট্রলার থেকে পড়ে তিনি নিখোঁজ হন। বেলাল পঞ্চগড় জেলার কুরবান আলীর ছেলে।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাবে শুক্রবার সকাল থেকে নোয়াখালীতে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে বৃষ্টির মাত্রা বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জে সকালে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির আওতায় ৪১৬ ইউনিটের ৬ হাজার ২৪০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র। ইতোমধ্যে ১১টি মেডিক্যাল টিম প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত ওষুধসহ প্রস্তুত রয়েছে। উপকূলীয় প্রতি উপজেলায় ২০০ প্যাকেট করে শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ৩০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ পাঁচ লাখ টাকা জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য মজুত রাখা হয়েছে। {���|�