পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে মুক্তিযোদ্ধার বসতবাড়ির সীমানার গাছপালা কেটে জমি দখল করেছে প্রতিপক্ষরা। রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) সকালে উপজেলার পূর্ব চরবলেশ^র গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এসময় বাধা দিতে গেলে মুক্তিযোদ্ধার এক পুত্রকে লাঞ্চিত করে প্রতিপক্ষ গ্রুপ। মুক্তিযোদ্ধার জমি দখল করা প্রতিপক্ষ এই গ্রুপটি স্থানীয় জামায়াত বিএনপির রাজনীতির সাথে সক্রিয় ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাস যাবত বিভিন্ন স্থানে পোস্টার,ব্যানার সেটে দেয়ার পরই আ.লীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে এক মুক্তিযোদ্ধা ও আ.লীগ পরিবারের জমি দখলের মিশনে নামে প্রতিপক্ষ গ্রুপটি। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ দুই যুগ ধরে আ.লীগ কর্মি, মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরিজীবী শাহজাহান হাওলাদারের সাথে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছে মৃত আব্দুল কাদের হাওলাদারের সন্তানদের সাথে। মুক্তিযোদ্ধা শাহাজাহান হাওলাদারকে ঐ বাড়ি থেকে উচ্ছেদের জন্য হত্যাচেস্টা সহ হামলা-মামলা ও নানা রকম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের নানা রকম হয়রানী করে আসছে প্রতিপক্ষ এ গ্রুপটি। শাহজাহান হাওলাদারের বসতবাড়িতে ঘরের পাশে প্রায় তিন যুগ আগের বন্ঠনকৃত তার জমির উপর সীমানা বরাবর প্রায় দেড় যুগ আগে বেড়া দেন তিনি। কিন্তু পাকা দালান কোঠা নির্মান করার জন্য রবিবার সকালে প্রতিপক্ষ স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত কর্মি হুমায়ূন কবির বাচ্চু হাওলাদার তার ভাই মাসুম হাওলাদার, সৌদি প্রবাসী নাসির হাওলাদার, ভাইর স্ত্রী জেসমিন বেগম, ভাতিজা জিহাদ হাওলাদার, চাচাতো ভাই সুমন হাওলাদার ও শুকুর হাওলাদার, তার বড় বোন নাসরিন বেগম সহ অঞ্জাত ১০/১২ জন লোক লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার ঘরের পাশে থাকা বেড়া ও এর গাছ পালা কেটে জমি দখল করেন। এসময় বাধা দিতে গেলে মুক্তিযোদ্ধার এক পুত্রকে লাঞ্চিত করে প্রতিপক্ষ গ্রæপের লোকজন। তাকে খুন জখমের হুমকি দিলে তিনি ওখান থেকে চলে এসে পরে বিষয়টি স্থানীয় থানা পুলিশকে অবহিত করেন। দুপুর ১১টার দিকে চন্ডিপুর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে দুজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে এসে শান্তি শৃংক্ষলা বজায় রাখতে প্রতিপক্ষ বাচ্চু গংদের সকল ধরনের ততপরতা বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন। এরপর দুপুরের দিকে পুলিশ চলে যাওয়ার পর তাদের নির্দেশ অমান্য করে পুরনো সীমানা ভেঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান হাওলাদারের অংশের ভিতরে ঢুকিয়ে একটি কাঠের ঘর তোলেন বাচ্চু ও তার ভাইয়েরা। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পরে রবিবার সন্ধ্যার দিকে বালিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন বয়াতি ও ইন্দুরকানী থানার ওসি হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মুক্তিযোদ্ধার অংশের ভিতরে উঠানো তাদের ঘর একদিনের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন এবং বিরোধ মিমাংশার জন্য উভয় পক্ষকে শালিশ বৈঠকে বসার আহবান জানান। এদিকে সোমবার সকালে বাচ্চু হাওলাদার মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিঞাকে উদ্দেশ্য করে গালাগাল করলে থানা পুলিশকে জানানো হলে এস আই জসিম ঘটনাস্থলে যান। এসময় মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী তাকে বিষয়টি খুলে বলেন। পরে তিনি সবাইকে শান্তি শৃংক্ষলা বজায় রেখে চলার পরামর্শ দিয়ে এখান থেকে চলে আসার পর নাসরিন বেগম মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তাকে মারধর করতে ঘরের সামনে যেয়ে তেড়ে আসেন। অপরদিকে ইউপি চেয়ারম্যান এবং ওসি প্রতিপক্ষকে বিরোধপূর্ণ জমির মিমাংসা না হওয়া পর্যন্ত সকল ধরনের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারী) তাদের কথা অগ্রাহ্য করে নির্মান কাজ চালিয়ে যান। পরে খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনা স্থলে যেয়ে এস আই জসিম নির্মান কাজ বন্ধ করে দেন। বর্তমানে বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন জড়ো করে প্রতিপক্ষ গ্রুপটি মারমুখি অবস্থান নেয়ায় মুক্তিযোদ্ধার পরিবারটি চরম আতংক ও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমার বসত ভিটা গ্রাস করার জন্য ঐ গ্রুপটি উঠে পড়ে লেগেছে। বছরের পর বছর ধরে আমার পরিবারকে ষড়যন্ত্র করে নানা ভাবে হয়রানী করে আসছে। ২০০১ সালের পরে শতাধিক লোক নিয়ে আমার ২২ শতাংশের একটি বাগানবাড়ি দখল করে নেয় নাসির হাওলাদার। গেল বছর আমার নিজ জমিতে পাকা দালানঘর নির্মান করতে গেলে ঐ গ্রুপটি বহিরাগত লোক নিয়ে নানা ভাবে বাধা-বিপত্তি তৈরী করে। পরে শালিশ বৈঠক ডাকা হলে জমি মেপে সীমানা পিলার বসিয়ে দেন শালিশগন। কিন্তু তা অমান্য করে তারা আমার লাগানো ২৩ ফেব্রুয়ারী সীমানার সকল গাছপালা কেটে ফেলে দেয় এবং পরে ঐখানে ঘর উত্তোলন করে। তিনি আরো বলেন, এই গ্রুপটি সবসময় গায়ে পড়ে ফিতনা ফ্যাসাদ তৈরী করার জন্য একের পর এক ঝামেলা পাকাচ্ছে। আনীত অভিযোগের বিষয়ে বাচ্চু হাওলাদার বলেন, আমাদের নিজেদের জমির সীমানা ঠিক রাখার জন্য আমরা গাছপালা কেটে বেড়া সরিয়ে দিয়েছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন বলেন, দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এক বছর আগে আমারা শালিশ বৈঠকে বসে আমিন দিয়ে জমি মেপে সীমানা নির্ধারন করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন মুক্তিযোদ্ধার দেয়া বেড়ার গাছপালা প্রতিপক্ষরা কেটে ফেলায় আবারও বিরোধ দেখা দেয়। তাই আমরা উভয় পক্ষকে নিয়ে আবারো শালিশ বৈঠকের মাধ্যমে মিমাংসার চেস্টায় আছি। মিমাংশা না হওয়া পর্যন্ত ঐখানে বিল্ডিং নির্মানের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইন্দুরকানী থানার ওসি হাবিবুর রহমান জানান, সরেজমিনে আমি পরিদর্শন করেছি। দীর্ঘদিন ধরে দুই পরিবারের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছে। গত রবিবার শাহজাহান হাওলাদারের লাগানো সীমানার বেড়ার বেশকিছু গাছপালা কেটে ফেলে তার প্রতিপক্ষরা। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে বিরোধটি মিমাংশার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।