সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও বাজারে এসে অল্প সময়েই এগিয়ে গেছে ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন সেবা ‘নগদ’। যাত্রা শুরুর ১০ মাসেই নগদের গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ। দৈনিক লেনদেন ছাড়িয়েছে ১০০ কোটি টাকা। ডাক বিভাগের সঙ্গে এই সেবা দিচ্ছে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজি লিমিটেড। নগদের ৫১ শতাংশ শেয়ার ডাক বিভাগের হাতে, বাকি ৪৯ ভাগ থার্ড ওয়েভের।
নগদের সেবা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফলে মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নিয়মকানুন রয়েছে, তা তাদের অনুসরণ করতে হয় না। অন্য সব মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম কোনো না কোনো ব্যাংকের সেবা বা সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তবে নগদ হচ্ছে সরকারের ডাক বিভাগের সহযোগী। নগদের লেনদেন সীমা বেশি এবং যেকোনো মোবাইল নম্বরে টাকা পাঠানোর সুযোগ থাকায় অল্প সময়ে নগদের বড় ধরনের গ্রাহক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রবৃদ্ধির এই ধারা ধরে রেখে মোবাইল ফোনভিত্তিক আর্থিক বাজার বা লেনদেনের অর্ধেক নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় নগদ। এরপর ধীরে ধীরে টাকা পাঠানোর খরচ কমিয়ে আনাই তাদের লক্ষ্য। নগদ সেবা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর আহমেদ মিশুক। তিনি থার্ড ওয়েভ টেকনোলজি লিমিটেডেরও এমডি ছিলেন। সরকার ২০১৭ সালে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করলে তানভীর আহমেদের প্রতিষ্ঠান থার্ড ওয়েভ টেকনোলজি টেন্ডার জমা দেয়। ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর থার্ড ওয়েভ কাজটি পেয়ে যায়। সরকারি-বেসরকারি মালিকানায় নগদ অনুমোদিত হলে তানভীর আহমেদ এটির এমডি হন।
২০১৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাইলট বা পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে নগদের যাত্রা শুরু হয়। একই বছরের ২৬ মার্চ নগদ সেবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তানভীর আহমেদ বলেন, ‘এখনো দেশের ৬৬ শতাংশ মানুষ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে। তাঁদের ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক সেবায় আনা যাবে না। এ জন্য এমন সেবা খুঁজছিলাম, যাতে সহজেই সবাই সেবাটি নিতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের ২২টি ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সফল হতে পারেনি। মানুষ বলে, ডাক বিভাগ মরে গেছে। আমাদের কারণে যেন নতুন করে কলঙ্কের মধ্যে না পড়ে, সেই চেষ্টা করেছি। সফল হতে না পারলে প্রকল্প ফেরত দিয়ে দিতাম। এ জন্য বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েছি।’
নতুনত্ব দিয়েই নগদের যাত্রা শুরু। ডিজিটাল কেওয়াইসির (গ্রাহকসম্পর্কিত তথ্য) মাধ্যমে হিসাব খোলার ব্যবস্থা করেছে। নগদের গ্রাহক না হয়েও যেকোনো মোবাইল নম্বরে টাকা পাঠানোর সুযোগ এনে দিয়েছে। আর গ্রাহকেরা একবারে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা ও উত্তোলন করতে পারেন। এভাবে দৈনিক আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত জমা ও উত্তোলনের সুবিধা রয়েছে। আবার সেবার খরচও কম।