ব্যাংকের শাখা নেই অথচ অ্যাকাউন্ট খোলা, টাকা জমা-উত্তোলন, রেমিট্যান্স গ্রহণ, বিল প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা পাওয়া যাচ্ছে গ্রামগঞ্জে। এসব সেবা মিলছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। যেখানে ব্যাংকের শাখা নেই, সেখানে এজেন্টই হয়ে উঠেছে ব্যাংকের শাখা। আর এসব এজেন্ট এখন সারাদেশের প্রায় ৮ হাজার ৭৫৭টি আউটলেটে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। এতে ব্যাংক শাখার বাইরে বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহক হয়েছেন ৩২ লাখ মানুষ।
এজেন্ট ব্যাংকিং হলো, শাখা না খুলে চুক্তি করে প্রতিনিধির মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা দেওয়া। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা সম্প্রসারণ করেছে অনেক ব্যাংকে এবং পাশা পাশি নতুন করে ডিজিটাল পোস্ট অফিসের ই-সেন্টারের মাধ্যেমে প্রতন্ত অঞ্চলে এই সেবা পৌছানোর জন্য চলতি মাস থেকে কাজ শুরু করেছে বিভিন্ন ব্যাংক। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
মাঠপর্যায়ে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা। এতে লেনদেনের পাশাপাশি বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যাও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ডাচ্–বাংলা ব্যাংক। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে খোলা মোট অ্যাকাউন্ট সংখ্যার ৬০ শতাংশের বেশি এ ব্যাংকের। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ব্যাংক এশিয়া এবং আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক।
জানা গেছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহক তার চলতি হিসাবে সর্বোচ্চ চারবার ২৪ লাখ টাকা নগদ জমা এবং সর্বোচ্চ দুটি লেনদেনে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করতে পারেন। সঞ্চয়ী হিসাবে সর্বোচ্চ দুবার আট লাখ টাকা নগদ জমা এবং সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা করে দুটি লেনদেনে ছয় লাখ টাকা উত্তোলন করা যায়। তবে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে এ উত্তোলনসীমা প্রযোজ্য হয় না। এক্ষেত্রে দিনে দুইবার জমা ও উত্তোলন করা যায়।
এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটগুলো কোনও চেক বই বা ব্যাংক কার্ড ইস্যু করতে পারে না। এছাড়া, এজেন্টরা বৈদেশিক কোনও লেনদেনও করতে পারে না। এজেন্টদের কাছ থেকে ব্যাংকের কোনও চেকও ভাঙানো যায় না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মোট গ্রাহকের ৩ শতাংশ দিনমজুর। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ২৯ শতাংশ গ্রাহক ছোট ব্যবসায়ী। এছাড়া, মোট গ্রাহকের ৭ শতাংশ কৃষক ও ১৮ শতাংশ গৃহিণী।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রসার ঘটছে। এর সম্ভাবনাও অনেক বেশি। এটা আমাদের দেশে আলোড়ন ফেলে দিতে পারে।’